ওয়েবসাইট কি?
ওয়েবসাইট হলো একটি আইপি বা ডোমেইনের সাহায্যে অ্যাক্সেসযোগ্য একটি বা একাধিক ওয়েব পেজের সমন্বয়। আমরা উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করতে পারি: wikipedia.org, google.com, bikroy.com, aliexpress.com এবং amazon.com। প্রাতিষ্ঠানিক কাজ থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত সকল কাজ কোন না কোন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে করা হয়। অতএব আমাদের বর্তমানে জীবনে ওয়েবসাইট অনেক প্রয়োজনীয়।
ওয়েবসাইট কি দিয়ে তৈরি এবং কিভাবে তৈরী করতে হয়?
ওয়েবসাইট মুলত কিছু জটিল প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের সমন্বয়ে তৈরী। তবে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হলে প্রথমে প্রয়োজন হোস্টিং। আপনার ওয়েবসাইট পুরো বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার জন্য হোস্টিং প্রয়োজন। হোস্টিং সার্ভারে আপনার ওয়েবসাইটের সকল ফাইল জমা থাকে এবং কেও ভিজিট করলে ওয়েবসাইট নির্দিষ্ট ফাইলটি দেখায়। এবার ওয়েবসাইট ওপেন করার জন্য প্রয়োজন আইপি অ্যাড্রেস অথবা ডোমেইন।
হোস্টিং এর সাথে সাধারণত আইপি এড্রেস থাকে কিন্তু আইপি এড্রেস যেহেতু অনেক বড় হয় তাই বর্তমানে সবাই ডোমেইন ব্যবহার করে। ডোমেইন হলো আলফানিউমেরিক আইপি অর্থাৎ আইপি তে শুধু সংখ্যা থাকে কিন্তু ডোমেইনে সংখ্যা এবং অক্ষর দুটোই থাকে। ব্রাউজারে ডোমেইন নেম টাইপ করে একটি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যায়। ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বা কোড ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বর্তমানে প্রযুক্তির দৌলতে কোনো কোডিং ছাড়াই ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়।
ওয়েবসাইটের প্রকারভেদ
নিচে ওয়েবসাইটের প্রকারভেদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
গাঠনিক দিক থেকে ওয়েবসাইটের প্রকারভেদ
গাঠনিক দিক থেকে ওয়েবসাইট দুই ধরনের। যথা:
- স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট
- ডাইনামিক ওয়েবসাইট
এই দুইটি প্রকারভেদ নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
১. স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট
এই ধরনের ওয়েবসাইট মুলত HTML ( Hyper Text Markup Language ) এবং CSS ( Cascading Style Sheets ) দিয়ে ডিজাইন করা হয়। এধরনের ওয়েবসাইট সম্পুর্ন মালিকের দখলে থাকে অতএব ওয়েবসাইটের মালিক কোনো কিছু পরিবর্তন করলে তা পরিবর্তন হয়ে যাবে। স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট গুলো নিজেকে পরিবর্তন করতে পারে না। ধরুন আপনি এবং আপনার বন্ধু একটি স্ট্যাটিক ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলেন। দুই জনের ক্ষেত্রেই স্ট্যাটিক ওয়েবসাইটের হোমপেজ একই হবে। কারন এধরনের ওয়েবসাইট নিজে নিজে পরিবর্তিত হতে পারে না।
স্ট্যাটিক ওয়েবসাইটের বৈশিষ্ট্য
- খুব তাড়াতাড়ি লোড হয়।
- কম স্টোরেজের হোস্টিং হলেই চলে।
- HTML, CSS এবং JS কোড দিয়ে সাধারণত তৈরী করা হয়।
- ডাটাবেজের প্রয়োজন হয় না।
- নিয়ন্ত্রণ করা সহজ।
২. ডাইনামিক ওয়েবসাইট
এই ধরনের ওয়েবসাইটের কাঠামো html দিয়ে তৈরি করা হলেও আরো বিভিন্ন ধরনের কোড ব্যবহার করা হয় যেমন: PHP, JavaScript, Python ইত্যাদি। এই ওয়েবসাইট গুলো নিজেকে পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তন করতে পারে। যেমন একটি ডাইনামিক ওয়েবসাইটে যদি সাইন আপ অপশন থাকে তাহলে আপনি সাইন আপ করার পূর্বে একরকম এবং সাইন আপ করার পরে আরেকরকম দেখতে পারবেন। কিন্তু পেজ একই থাকবে। এধরনের ওয়েবসাইট ডাইনামিক ওয়েবসাইট নামে পরিচিত। ফেসবুক একটি ডাইনামিক ওয়েবসাইট। আপনি যদি আপনার বন্ধুর সাথে ফেসবুক ওয়েবসাইট অপেন করেন তাহলে দেখবেন আপনার হোমপেজ আপনার বন্ধুর হোমপেজের থেকে আলাদা।
ডাইনামিক ওয়েবসাইটের বৈশিষ্ট্য
- ডাটাবেজ থেকে তথ্য বের হতে সময় নেই তাই লোডিং স্পিড তুলনামুলক কম থাকে।
- হোস্টিং স্টোরেজ এবং ব্যান্ডউইথ তুলনামুলক বেশি প্রয়োজন হয়।
- বিভিন্ন ধরনের জটিল প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ যেমন: PHP, Python, Perl, Node.js ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
- সকল তথ্য ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকে।
- নিয়ন্ত্রণ করা তুলনামূলক কঠিন।
উদ্দেশ্য অনুযায়ী ওয়েবসাইটের প্রকারভেদ
একটি ওয়েবসাইট বিভিন্ন উদ্দেশ্যে তৈরি হতে পারে। নিচে কয়েকটি বিষয় ভিত্তিক ওয়েবসাইটের প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১. পার্সোনাল ওয়েবসাইট
এই ধরনের ওয়েবসাইট শুধুমাত্র একটি ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। যেমন অফিসের বিভিন্ন কাজ ম্যানেজ করার জন্য একটি পার্সোনাল ওয়েবসাইট তৈরি করা যেতে পারে। আবার অনেকে কাজ শেখার জন্য পার্সোনাল ওয়েবসাইট তৈরি করে।
২. ব্লগ
ব্লগ হলো একটি দিনলিপি বা ব্যক্তিগত পত্রিকা। ব্লগে একজন তার জ্ঞান লেখনী বা মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করে। এই ধরনের ওয়েবসাইট ইন্টারনেটে প্রচুর রয়েছে।
৩. ই-কমার্স ওয়েবসাইট
যেসব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পন্য ক্রয় করা যায় সেসব ওয়েবসাইটকে ই-কমার্স ওয়েবসাইট বলে। বর্তমানে অনেক বড় বড় কোম্পানি যেমন Amazon, Alibaba, Ebay, Daraz ইত্যাদি কোম্পানির ওয়েবসাইট হলো ই-কমার্স ওয়েবসাইট।
৪. মার্কেটপ্লেস
যেসব ওয়েবসাইটে পন্য ক্রয় বিক্রয় হয় সেসব ওয়েবসাইটকে মার্কেটপ্লেস বলে। এধরনের ওয়েবসাইটে একজন ব্যক্তি চাইলে পন্য কিনতে পারে আবার বিক্রি করতে পারে। এরকম কিছু মার্কেটপ্লেস হলো themeforest, Bikroy.com, fiverr, upwork, guru ইত্যাদি।
৫. ব্যবসায়িক ওয়েবসাইট
ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য যেসব ওয়েবসাইট ব্যবহার করা হয় সেসব ওয়েবসাইট গুলোকে ব্যবসায়িক ওয়েবসাইট বলে। সাধারণত সকল ব্যবসায়িক কোম্পানির এই ধরনের ওয়েবসাইট থাকে।
৬. স্ট্রিমিং ওয়েবসাইট
যেসব ওয়েবসাইটে অডিও বা ভিডিও স্ট্রিম করা যায় তাকে স্ট্রিমিং ওয়েবসাইট বলে। YouTube, Amazon prime, TikTok, Spotify ইত্যাদি স্ট্রিমিং ওয়েবসাইট।
৭. ডাউনলোড ওয়েবসাইট
যেসব ওয়েবসাইট থেকে কোনো কিছু ডাউনলোড করা যায় সেসব ওয়েবসাইট গুলোকে ডাউনলোড ওয়েবসাইট বলে। বর্তমানে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট আছে যেখান থেকে ভিডিও, মিউজিক, ইমেজ, ফাইল ইত্যাদি ডাউনলোড করা যায়। এসকল ওয়েবসাইট গুলোকে ডাউনলোড ওয়েবসাইট বলে।
৮. সামাজিক ওয়েবসাইট
যেসব ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের মানুষ তাদের মতামত ব্যক্ত করতে পারে সেসব ওয়েবসাইটকে সামাজিক ওয়েবসাইট বলে। এই ধরনের কয়েকটি ওয়েবসাইট হলো Facebook, Twitter, Pinterest ইত্যাদি।
৯. প্রশ্ন উত্তর ওয়েবসাইট
এই ধরনের ওয়েবসাইটে যেকেও প্রশ্ন উত্তর করতে পারে। এই ধরনের কয়েকটি ওয়েবসাইট হলো bissoy, quora, reddit ইত্যাদি।
এছাড়া আরোও বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট আছে যেমন: পোর্টফোলিও, টুলস, পোডকাস্ট ইত্যাদি।
ওয়েবসাইট কিভাবে তৈরি করবো?
আপনি মোট দুই ভাবে ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন। প্রথমটি হলো প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে এবং দ্বিতীয়টি হলো কোনো ওয়েবসাইট বিল্ডারের সাহায্যে। কম খরচে ওয়েবসাইট তৈরী করতে চাইলে আপনি কোন ওয়েবসাইট বিল্ডার ব্যবহার করতে পারেন। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট বিল্ডার আছে। সেগুলোর কয়েকটি নিচে আলোচনা করা হলো।
১. ওয়ার্ডপ্রেস
বর্তমানে সবথেকে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট বিল্ডার হলো ওয়ার্ডপ্রেস। ওয়ার্ডপ্রেস একটি CMS ( Content Management System ) প্লাটফর্ম যার মাধ্যমে প্রায় যেকোনো ধরনের ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী ৪৩% এর বেশি ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে তৈরি। এর মধ্যে অনেক বড় বড় কোম্পানি যেমন ফেসবুক, মাইক্রোসফট, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস ইত্যাদি ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে তৈরি। আপনি ওয়ার্ডপ্রেস এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট wordpress.com থেকে ফ্রিতে ওয়েবসাইট বানাতে পারেন। তবে ফ্রি ভার্সনে আপনি তেমন সুবিধা পাবেন না এবং ডোমেইন সেটআপ করতে পারবেন না। তবে আপনি ওয়ার্ডপ্রেস সফটওয়্যার দিয়ে ফ্রিতেই ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন। এর জন্য আপনার ডোমেইন এবং হোস্টিং প্রয়োজন হবে যা সাধারণত ফ্রিতে পাওয়া যায় না।
২. ব্লগার
ব্লগার গুগলের দ্বারা পরিচালিত একটি উন্মুক্ত পরিসেবা। বর্তমানে ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করার প্লাটফর্মের মধ্যে ব্লগার অন্যতম। আপনি যদি ডোমেইন হোস্টিং ছাড়া সম্পুর্ন ফ্রিতে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান তাহলে ব্লগার ব্যবহার করতে পারেন। ব্লগার আপনাকে ফ্রিতে একটি সাবডোমেইন দেবে এবং গুগলের সার্ভারে আপনার ওয়েবসাইট হোস্টেড থাকবে। তাছাড়া ব্লগারে আপনি কয়েকটি থিম ফ্রিতে পেয়ে যাবেন এবং সেই থিম লে আউটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। আপনি চাইলে কাস্টম থিম ব্লগার ওয়েবসাইটে ইনস্টল করতে পারবেন। আবার আপনি থিমের সম্পুর্ন কোড ইডিট করতে পারবেন। তাছাড়া ব্লগার যেহেতু গুগলের প্লাটফর্ম তাই আপনি ব্লগার থেকে দেওয়া সাবডোমেইনে এডসেন্স পাবেন। চাইলে আপনি টপ লেভেলের ডোমেইন ব্লগারে সেট করতে পারবেন।
৩. shopify
আপনি যদি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরির কথা ভাবেন তাহলে আপনার জন্য shopify সবথেকে ভালো হবে। যখন সবদিক থেকে ওয়ার্ডপ্রেস রাজত্ব করছিল তখন shopify ই-কমার্সের রাজত্ব ওয়ার্ডপ্রেসের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে ছোট বড় প্রায় সকল কোম্পানি তাদের ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য সাধারণত এটি ব্যবহার করে। shopify দিয়ে সহজেই ই-কমার্স ওয়েবসাইট ডিজাইন করা সহ প্রোডাক্ট ম্যানেজ এবং পেমেন্ট গ্রহন ইত্যাদি করা যায়। আপনি এটি দিয়ে প্রায় সব ধরনের ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন।
৪. wix
বর্তমানে ড্র্যাগ এন্ড ড্রপ ওয়েবসাইট বিল্ডার গুলো অনেক জনপ্রিয়। সেগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। wix এর সাহায্যে আপনি কোনো কোডিং জ্ঞান ছাড়াই সম্পুর্ন ওয়েবসাইট ডিজাইন করতে পারবেন। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন টুল ব্যবহার করে ওয়েবসাইটকে আরোও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারবেন। wix ব্যবহার করে ওয়েবসাইট তৈরি করলে আপনাকে হোস্টিং খরচ দেওয়া লাগবে না। একটি প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন নিয়ে আপনি ওয়েবসাইট তৈরী করতে পারবেন। এছাড়া ফ্রি ভার্সন আছে তবে ফ্রি ভার্সনে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে
৫. bubble
আরেকটি জনপ্রিয় এবং শক্তিশালী ওয়েবসাইট বিল্ডার হলো bubble। বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন টুল দিয়ে এটি ভরপুর। বর্তমানে অনেক কোম্পানি ব্যবসায়িক ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য এটি ব্যবহার করে। কারন এতে প্রচুর টুল আছে। তাছাড়া ড্র্যাগ এন্ড ড্রপ ওয়েবসাইট বিল্ডার ফিচার থাকাই কোনো কোডিং জ্ঞান ছাড়াই ওয়েবসাইট ডিজাইন করা যায়। bubble এর প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন নিলে আপনি কাস্টম ডোমেইন যুক্ত করতে পারবেন এবং সকল ফিচার উপভোগ করতে পারবেন।
এছাড়া আরো অনেক ধরনের ওয়েবসাইট বিল্ডার আছে যেমন:
- Site123
- Squarespace
- Webnode
- Web.com
- Weebly ইত্যাদি।
আজ এ পর্যন্তই। আশাকরি আমাদের আজকের আলোচনাটি ভালো লেগেছে। কোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।
Comments
Post a Comment