আমরা সাধারণত বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর জন্য ফেসবুক ব্যবহার করি। কিন্তু আপনি কি জানেন ফেসবুক থেকেও আয় করা যায়? হ্যা আপনি ফেসবুকে থেকে আয় করতে পারবেন। বর্তমানে বিভিন্ন ভাবে ফেসবুক থেকে আয় করা যায়। আজ আমি এই পোস্টে সেই বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
১. ভিডিও আপলোড করে আয়
ইউটিউবের মতো ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করে আয় করা যায়। ইউটিউবে যেমন ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে আয় করা যায় তেমনি ফেসবুকে পেজে আপনি ভিডিও আপলোড করে আয় করতে পারবেন। তাছাড়া নতুন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হলে ফেসবুকে খুব তাড়াতাড়ি ভাইরাল হওয়া যায়। বর্তমানে অনেকে তাদের ভিডিও ফেসবুকে আপলোড দিচ্ছে এবং অনলাইনে আয় করছে।
২. রিলস থেকে আয়
বর্তমানে ফেসবুক একটি নতুন পরিষেবা চালু করেছে যেখানে টিকটকের মতো ভিডিও আপলোড করা যাবে। তবে এটি এখনো সম্পূর্ণ ভাবে উন্মুক্ত করা হয়নি। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট গ্রাহক এই সুবিধাটি পাচ্ছে। এর জন্য আপনার ফেসবুক আইডিতে প্রফেশনাল মোড অন করতে হবে। প্রফেশনাল মোড অন করলে আপনি স্টোরি আপলোড দেওয়ার মতো টিকটক ভিডিও আপলোড দিতে পারবেন এবং অনলাইনে আয় করতে পারবেন।
৩. ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল থেকে আয়
আপনার কি নিউজ ওয়েবসাইট আছে? যদি থাকে তাহলে আপনি ফেসবুকের ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেলের মাধ্যমে আয় করতে পারবেন। ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল অনেকটা গুগলের AMP এর মতো। তবে এটি শুধু ফেসবুকের অফিসিয়াল মোবাইল অ্যাপে ব্যবহার করে যায়। এক্ষেত্রে ফেসবুক আপনার ওয়েব পেজকে অপ্টিমাইজ করে নেবে এবং মোবাইলের মাধ্যমে তাড়াতাড়ি লোড হবে। আপনার পোস্টের মাঝে ফেসবুক কিছু বিজ্ঞাপন দেখাবে এবং আপনি সেখান থেকে আয় করতে পারবেন।
৪. ফেসবুক গ্রুপ মনিটাইজেশন করে আয়
২০১৮ সালে ফেসবুক গ্রুপ মনিটাইজেশন চালু করে। গ্রুপ মনিটাইজেশন চালু করার প্রধান লক্ষ্য হলো গ্রুপের এডমিনকে পারিশ্রমিক দেওয়া। একজন গ্রুপের এডমিন খুব কষ্ট করে একটি গ্রুপ কে দাড় করায়। তাঁদের কিছুটা পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য ফেসবুক এই গ্রুপ মনিটাইজেশন চালু করে। তবে এটি ফেসবুক পেজ মনিটাইজেশন থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন গ্রুপ মনিটাইজেশন থেকে কিভাবে আয় হয়? ধরুন একটি কোম্পানি তাদের পন্য প্রচারের জন্য ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিলো। সেই বিজ্ঞাপন দাতার টার্গেট ধরুন দশ হাজার অডিয়েন্স। এর জন্য সেই কোম্পানি ফেসবুক কে ১০ ডলার দিতে রাজি আছে। এখন আপনি যদি আপনার মনিটাইজেশন পাওয়া গ্রুপ থেকে সেই পন্যে দশ হাজার অডিয়েন্স এনে দিতে পারেন তাহলে সেই ১০ ডলার আপনি পেয়ে যাবেন। এভাবেই ফেসবুক গ্রুপ মনিটাইজেশনের মাধ্যমে আয় করা যায়।
৫. স্পন্সর থেকে আয়
আপনি যদি ফেসবুকে অনেক জনপ্রিয় হয়ে হন তাহলে স্পন্সর নিয়ে সহজেই অনলাইনে আয় করতে পারবেন। এক্ষেত্রে একজন কোম্পানি আপনাকে তাদের পন্য প্রচার করার জন্য কিছু টাকা দেবে এবং আপনাকে তাদের পন্য প্রচার করে দিতে হবে। যারা ফেসবুকে অনেক জনপ্রিয় তারা স্পন্সর নিয়ে অনলাইনে আয় করে। তবে ফেসবুকে সহজেই জনপ্রিয় হওয়া যায়না। এর জন্য ভালো ভালো কনটেন্ট নিয়মিত আপলোড করতে হয়।
৬. আফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয়
বর্তমানে ফেসবুক থেকে আয় করার এটি সবথেকে জনপ্রিয় উপায়। একটু জনপ্রিয়তা পেলে আপনি সহজেই আফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করতে পারবেন। পন্যের উপর কমিশন দিয়ে অন্যের দ্বারা পন্য প্রচার করার পদ্ধতিকে আফিলিয়েট মার্কেটিং বলে। তবে এর জন্য একটি বিশ্বস্ত এবং অধিক কমিশন প্রদানকারী আফিলিয়েট প্রোগ্রাম খুজে বের করতে হবে। আপনি ইন্টারনেটে এমন অনেক প্রোগ্রাম পেয়ে যাবেন।
৭. অ্যাপ মনিটাইজেশন করে আয়
গুগল এডমবের মতো ফেসবুকের অ্যাপ মনিটাইজেশন নেটওয়ার্ক রয়েছে। আপনি যদি একজন অ্যাপ ডেভেলপার হয়ে থাকেন তাহলে ফেসবুকের অ্যাপ মনিটাইজেশন করে অনলাইনে আয় করতে পারবেন। বর্তমানে অনেক অ্যাপ ফেসবুকের অ্যাপ মনিটাইজেশন দ্বারা মনিটাইজড্। তবে এক্ষেত্রে অ্যাপের ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি থাকতে হবে। অন্যথায় আপনি বেশি টাকা আয় করতে পারবেন না।
৮. রিচার্জের ব্যবসা করে আয়
বর্তমানে ফেসবুকে এটি অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে সাধারণ সিম গুলোকে ড্রয়েড সিমে পরিণত করে রিচার্জের ব্যবসা করা যায়। এক্ষেত্রে কম টাকায় ইন্টারনেট কিনে বেশি টাকায় বিক্রি করে আপনি লাভবান হতে পারবেন। রিচার্জের ব্যবসা আপনি অন্য স্থানেও করতে পারবেন তবে ফেসবুকে সবথেকে বেশি কাস্টমার পাওয়া যায়। বর্তমানে অনেকে ড্রয়েড সিমে কনভার্ট করে দেয় তাছাড়া রিসেলার রিচার্জ করে দেয়। আপনি তাদের কিনে বেশি দামে বিক্রি করে মুনাফা আয় করতে পারবেন।
৯. ডলার বিক্রি করে আয়
বর্তমানে ফেসবুকে ডলার বিক্রি অনেক জনপ্রিয় একটি অনলাইন ইনকাম পদ্ধতি। বাংলাদেশে সাধারণত ডুয়াল কারেন্সি কার্ড পাওয়া যায় না। তাই অনেকে অন্য জনের শরণাপন্ন হয়। আপনার কাছে যদি ডুয়াল কারেন্সি কার্ড থাকে তাহলে অন্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করে লভ্যাংশ আয় করতে পারবেন। বর্তমানে অনেকে কম দামে ডলার কিনে বেশি দামে বিক্রি করে মুনাফা আয় করছে। তবে বর্তমানে প্রায় সব ব্যাংকে ডুয়াল কারেন্সি কার্ড নিতে গেলে পাসপোর্ট প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে আপনাকে একটি পাসপোর্ট তৈরী করতে হবে।
১০. এডমিন ডিল করে ফেসবুক থেকে আয়
এডমিন ডিলের মাধ্যমে খুব সহজেই আয় করা যায়। এখন এডমিন ডিল কি? ধরুন একজন গ্রুপ মেম্বার তার কোনো জিনিস বেচতে চাই। তাই সে আপনার গ্রুপে বিজ্ঞাপন দিলো। ধরুন একজন সেই পন্য কিনতে আগ্রহী হলো। এখন অনলাইনে ধোকা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই একজন তৃতীয় পক্ষ থাকা দরকার যে কোনো চিন্তা ছাড়াই সেই জিনিসটি বিক্রি করতে সাহায্য করবে। যেহেতু সেই তৃতীয় পক্ষ তার সময় নষ্ট করে পন্য বিক্রি করতে সাহায্য করবে তাই তাকে কিছু কমিশন দেওয়া লাগবে। এভাবেই এডমিন ডিল থেকে আয় হয়। এখন কিভাবে এডমিন ডিল করতে হয় চলুন দেখে নিই।
কিভাবে এডমিন ডিল করবেন?
- প্রথমে যে পন্য বিক্রয় করবে সে গ্রুপে বিজ্ঞাপন দেবে।
- যে পন্য কিনতে চায় সে পন্যের মালিকের কাছে মেসেজ দিবে এবং দাম দর ঠিক করে নেবে।
- এরপর তারা এডমিনের সাথে যোগাযোগ করবে এবং ক্রেতা, বিক্রেতা ও এডমিন মিলে একটি গ্রুপ খুলবে।
- ক্রেতা এডমনিকে আলোচনা অনুযায়ী টাকা পাঠিয়ে দেবে।
- পন্য ক্রেতাকে বুঝিয়ে দেওয়ার পর এডমিন বিক্রেতাকে টাকা দিয়ে দেবে।
আজ এ পর্যন্তই। আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। এরকম আরোও আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিনিয়ত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ সবাইকে।
Comments
Post a Comment