আজকের পোস্টে আমরা মেয়েদের ওজন কমানোর উপায় জেনে নিব। আপনি যদি একজন মেয়ে হয়ে থাকেন এবং ঘরোয়া পদ্ধতি তে নিজের ওজন কমাতে চান তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আজকের পোস্ট এর মাধ্যমে আমরা মেয়েদের ওজন কমানোর বেশ কিছু কার্যকরী উপায় এবং মেয়েদের ডায়েট চার্ট বর্ণনা করা হবে। তাই আপনি যদি নিজেকে সুস্থ রাখতে চান এবং নিজের শারীরিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে চান তাহলে অবশ্যই অবশ্যই সম্পন্ন পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
আরও জানতে পড়ুন: বাদাম মাখনের উপকারিতা
আমাদের মধ্যে অনেক মেয়ে আছে যারা তাদের মোটা শরীর নিয়ে খুব চিন্তিত। তবে চিন্তার কিছু নেই। কিছু সহজ নিয়ম মেনে ওজন কমাতে পারেন। আমরা এই পোস্টে মেয়েদের অতি দ্রুত ওজন কমানোর কিছু টিপস এবং মেয়েদের ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট বর্ণনা করেছি। দয়া করে সম্পূর্ণ পোস্টে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়
ওজন কমাতে অনেকের কাছেই পরিচিত ও জনপ্রিয় পদ্ধতি সকালে খালি পেটে লেবুপানি পান করা। লেবু ও পানি দুটো উপাদান আলাদাভাবে শরীরের জন্য উপকারী। কিন্তু এই দুটো উপাদান একসঙ্গে কি আসলেই ততটা উপকারী, যতটা মনে করা হয়?
লেবুর রস মেশানো পানি স্বাদে ও গুণে শরবত হিসেবে চমৎকার। এটি পাকস্থলি ও অন্ত্রের অন্যান্য অংশ থেকে পাকরস তৈরিকে ত্বরান্বিত করে। পেটফাঁপা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমিয়ে পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। ভারী খাবার খাওয়ার পর কোমল পানীয়র পরিবর্তে বেছে নিতে পারেন লেবুপানি।
আমরা অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা বা কফি চাই। চা-কফি শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করে। এ ক্ষেত্রে দিনের শুরু করতে পারেন লেবুপানি দিয়ে। ৪০০ মিলিলিটার কুসুম গরম পানিতে দুই চা–চামচ লেবুর রস দিয়ে একটু মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন। এটি বিপাকক্রিয়ার হার বাড়ায়। এ কারণে সারা দিনে আপনি যা খান, তা সহজেই হজম হয়ে যায়। খালি পেটে লেবু-পানি-মধু পানে ক্ষুধা কম লাগে। সারা দিনে খাবার কম খাওয়া হয়। শরীরে ক্যালরি কম প্রবেশ করে। এ কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।
যেভাবে পান করবেন
সকালে নাশতা করার অন্তত ৩০ মিনিট আগে লেবুপানি পান করুন। ক্যাফেইন আমাদের শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করে। চা-কফির পরিবর্তেও লেবুপানি ভালো। এটি পানিশূন্যতা দূর করে। তবে দিনে দুইবারের বেশি লেবুপানি পান করবেন না।
লেবুপানির সঙ্গে খানিকটা মধু মিশিয়ে নিলে ক্ষুধা কম লাগে। খাওয়া কম হয়। এ কারণে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি প্রবেশ করতে পারে না।
লেবুপানিতে অতিরিক্ত ভিটামিন সি থাকায় দাঁতের অ্যানামেল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই পান করার পর ভালোভাবে কুলি করে মুখ পরিষ্কার করে নিন।
সতর্কতা : অ্যাসিডিটি হলে পান করা বাদ দিন।
মেয়েদের ওজন কমানোর জন্য সেরা ডায়েট চার্ট:
মেয়েদের ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট পুরোপুরি অনুসরণ করুন । সকাল, দুপুর ও রাতে কি খাবেন এবং কতটুকু খাবেন তা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। আপনার দৈনিক ক্যালোরি কতটুকু প্রয়োজন তা নির্ধারণ করুন। এর মধ্যে ৫০ ভাগ ক্যালোরি সকালে, ৩৬ ভাগ দুপুরে আর ১৪ ভাগ রাতে খাবেন।
সকালের খাবার:
- সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। সপ্তাহে একদিন পরপর খান। বাকি চার দিন আদা, হলুদ ও আমলকি ফুটিয়ে পানি পান করুন। ওজন কমানোর পাশাপাশি এটি শরীর ও ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
- সকালে উঠুন এবং পানীয় পান করার আধা ঘন্টা পরে নাস্তা করুন। অনেকেই সকালের নাস্তা খেতে চান না। কিন্তু এটা একেবারেই করবেন না। বরং সকালের নাস্তা ভারী হওয়া উচিত। দুটি রুটি, এক বাটি তরকারি এবং একটি সেদ্ধ ডিম খান। মাঝে মাঝে সামান্য মাখন ও দুটি ডিম সেদ্ধ করে চারটি রুটি খান। চিনি ছাড়া রুটি খান। পারলে সামান্য গোলমরিচ ছিটিয়ে দিন।
- সকালের নাস্তায় আপেল, আঙ্গুর, পেঁপে বা যেকোনো মৌসুমি ফল রাখার চেষ্টা করবেন। এছাড়াও খেতে পারেন পোহা, দুধের রুটি বা হালকা সেদ্ধ করা সবজির স্যুপ। সকালে একেকদিন একেক ধরণের খাবার খান।
দুপুরের খাবার:
- যেহেতু বাঙালি ভাত ছাড়া বাঁচতে পারে না, তাই দুপুরে ভাত খান। তবে এক বাটির বেশি নয়। এর সাথে দু-একটি রুটি খান। ঘরে রান্না করা ডাল, সবজি, মাছ খান। তবে কম তেল মশলা যুক্ত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- যাদের ভাত খাওয়ার অভ্যাস আছে এবং দুপুরের খাবারের পর ঘুমানোর অভ্যাস আছে তাদের তা বন্ধ করা উচিত। ওজন কমাতে চাইলে খাওয়ার পর বালিশ দিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস ত্যাগ করুন।
রাতের খাবার:
- রাতে ভাত না খাওয়া খুব ভালো। কিন্তু ভাত যদি খেতেই হয় তবে আধা বাতির বেশি নয়। সাথে একটা রুটি। এক বাটি ডাল আর এক বাটি তরকারি। রাতে মাছ, মাংস ও ডিম না খাওয়াই ভালো।
- রাত আটটা থেকে নয়টার মধ্যে ডিনার করুন। খাওয়ার পর ঘুমাতে যাবেন না। রাতের খাবারের এক ঘণ্টা পর ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর ১০টি সহজ উপায়
- উচ্চ প্রোটিনযুক্ত সকালের নাস্তা গ্রহণ করুন।
- চিনিযুক্ত পানীয় এবং এমনকি মিষ্টি ফলের রস এড়িয়ে চলুন।
- খাবারের আধাঘন্টা আগে ২ গ্লাস পানি পান করুন। এটি আপনাকে পরিমিতভাবে খেতে সাহায্য করবে।
- ওজন কমাতে সাহায্য করে এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- বেশি দ্রবণীয় ফাইবার বা খাবার যা জলে মেশানো যেতে পারে সেবন করুন।
- নিয়মিত চা এবং কফি খাওয়া। কিন্তু আরও ভালো হয় যদি ওজন কমানোর চা বা কফি পান করা।
- জৈব বা প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। অর্থাৎ যে খাবার কোনোভাবেই প্রক্রিয়াজাত করা হয়নি।
- ধীরে ধীরে খান। যারা দ্রুত খায় তাদের ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ধীরে ধীরে খাওয়া আপনাকে অল্প খাবারে পরিপূর্ণ করবে এবং ওজন কমানোর হরমোন বাড়াবে।
- ছোট প্লেটে খান। গবেষণায় দেখা গেছে যে ছোট প্লেটে খাওয়ার ফলে খাবারের পরিমাণ কম হয়। যদিও এটি হাস্যকর কিন্তু সত্য।
- রাতে ঘুম ভালো হওয়া উচিত। অনির্দিষ্ট এবং অনিয়মিত ঘুম ওজন বৃদ্ধির জন্য একটি গুরুতর ঝুঁকির কারণ। তাই রাতে ভালো ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ
মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর ঔষধ
ব্যায়াম না করে ওজন কমানোর উপায়
অনেকের শরীরচর্চার সময় নেই। এমন পরিস্থিতিতে তারা ব্যায়াম না করেই ওজন কমানোর উপায় খুঁজছেন। ব্যায়াম ছাড়াও কম ক্যালরি গ্রহণ, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ, সঠিক পরিমাণ পানি পান ইত্যাদি ওজন কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তবে নিয়মিত হাঁটতে হবে। নিয়মিত আধা ঘন্টা হাত ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং অনেক রোগের ঝুঁকিও কমায়। জেনে নিন ব্যায়াম ছাড়া কীভাবে ওজন কমানো যায়-
বাড়ির খাবার
প্রতিটি খাবার নিজেই প্রস্তুত করার চেষ্টা করুন। এতে খরচ তো কমবেই, সেই সঙ্গে খাবার কতটা স্বাস্থ্যকর হবে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়।
সাবধানে এবং ধীরে ধীরে খান
খাবার দ্রুত খেলে ওজন বাড়ে। তাই পুষ্টিবিদরা বলছেন, ওজন কমাতে খাবার খেতে হবে ধীরে ধীরে এবং সাবধানে। এতে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যাবে। খাবার কয়েকবার চিবিয়ে খেলে হজমশক্তি ভালো হয়।
স্বাস্থ্যকর খাবার খান
ক্ষুধা মেটানোর জন্য যেকোনো কোনো খাবার খাওয়া জরুরি নয়, বরং শরীর সুস্থ রাখতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দরকার। অস্বাস্থ্যকর তৈলাক্ত খাবার এবং প্যাকেটজাত খাবার এড়িয়ে দ্রুত ওজন কমানো সম্ভব। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাছ-মাংসের পাশাপাশি মৌসুমি ফল ও সবজি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
কম চাপ নিন
ওজন কমানোর জন্য মানসিকভাবে সুস্থ থাকাও গুরুত্বপূর্ণ। তাই চিন্তা মুক্ত হতে হবে। মানসিক চাপের কারণে ঘুমের অভাব। আর কম ঘুমালে ওজন কমানো সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনে অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমালে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
ভিটামিন ডি গ্রহণ এবং হাইড্রেটেড থাকা
প্রচুর পানি পান করে হাইড্রেটেড থাকুন। শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখা শুধুমাত্র সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্যই নয়, ত্বক ও চুল ভালো রাখার জন্যও অপরিহার্য।
এছাড়াও, ভিটামিন ডি সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। এ জন্য নিয়মিত সকালের সূর্যের আলো লাগাতে হবে। ভিটামিন ডি আছে এমন খাবার খান। প্রয়োজনে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট নিন।
সকালের নাস্তায় পুষ্টিকর খাবার রাখুন
ক্ষুধার্ত হলে ফল নাস্তা হিসেবে খান। এতে ক্ষুধা কমবে এবং শরীর পুষ্টিও পাবে। প্রত্যেকের সকালের নাস্তায় একমুঠো বাদাম বা ফল রাখুন। এতে দ্রুত ওজন কমবে।
ধ্যান/মেডিটেশন করুন
মানসিক শান্তির জন্য ধ্যান করলে অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যাও কমে। নিয়মিত ধ্যান ঘুমের উন্নতি ঘটায়। ফলে ধীরে ধীরে ওজন কমতে থাকে। এর জন্য প্রতিদিন অন্তত 15-20 মিনিট মেডিটেশন করুন।
কিভাবে প্রতিদিন ১কেজি করে ওজন কমানো যায়?
অতিরিক্ত ওজন নিয়ে আপনার চিন্তার শেষ নেই। কতটা ডায়েট, কতটা ব্যায়াম, কত কিছুই না করা হল। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। আপনি কি জানেন যে শুধুমাত্র একটি উপায়ে প্রতিদিন 1 কেজি ওজন কমানো সম্ভব!
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গবেষকগণের গবেষণায় দেখা গেছে লেবুর রস খুব দ্রুত শরীরের চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে। এমনকি লেবুর রস দিয়ে দিনে ১ কেজি পর্যন্ত ওজন কমানো যায়। লেবুর রস একটি প্রাকৃতিক খাদ্য যা শরীরের চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি শরীর থেকে বিষাক্ত টক্সিন দূর করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
তৈরি করতে যা যা লাগবে
- ৮/১০ কাপ পানি
- ৬/৮টি লেবুর রস
- ১০/১২টি পুদিনা পাতা
- আধা কাপ মধু
- কয়েকটি বরফ কুচি
কিভাবে তৈরী করবেন
- পানি হালকা গরম করুন। অতিরিক্ত গরম করবেন না।
- একসাথে পানি, লেবুর রস, মধু, পুদিনা পাতা মেশান
- এবার কয়েক ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে দিন।
- কয়েক ঘন্টা পরে এটি বের করে পান করুন।
- এক কাপ পানিতে একটি আইস কিউব যোগ করুন এবং এর বেশি নয়৷ কারণ অতিরিক্ত ঠান্ডা শরীরের এনার্জি কমিয়ে দেয়।
কখন খাবেন
- প্রতিদিন নাস্তার আগে এক গ্লাস লেবু পানি পান করুন। সকালের নাস্তায় সালাদ ও ফল খান।
- নাস্তার তিন ঘণ্টা পর কিছু ভাজা বাদাম দিয়ে আরেক গ্লাস লেবু পানি পান করুন।
- দুপুরের খাবারে অলিভ অয়েল এবং আপেল সিডার ভিনেগার দিয়ে সেদ্ধ ডিম এবং লেটুস সালাদ খান।
- বিকেল আরেক গ্লাস লেবু পানি পান করুন। এর সাথে আপনার পছন্দের যে কোন ফল খেতে পারেন।
- রাতের খাবারে এক টুকরো মাছ বা মাংস খান। এর সাথে সালাদ খেতে পারেন।
- রাতে ঘুমাবার আগে আরেক গ্লাস লেবু পানি পান করুন।
শেষ কথা - মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায়
আজকের সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনি মেয়েদের সহজে ওজন কমানোর উপায় এবং ডায়েট চার্ট সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আজকের এই পোস্টটি আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে। আশা করি এই পোস্ট থেকে আপনারা অনেক উপকৃত হতে পারবেন। এই পোস্টের লিংক আপনার বান্ধবীদের সাথে শেয়ার করুন যাতে তারা তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। দয়া করে আমাদের সাথেই থাকুন আমরা ভবিষ্যতে আরও সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব।
Comments
Post a Comment