Skip to main content

আরাকান ও রোহিঙ্গা মুসলমান : সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত (পর্ব - ৩ )

সু চি যেভাবে এক যুবকের স্বপ্ন পুড়িয়ে দিলেন

রো মাইয়ু আলী। বয়স ২৬ বছর। টগবগে রোহিঙ্গা তরুণ। স্বপ্ন ছিল লেখক হওয়া। এগোচ্ছিলেন সেভাবেই। তিনি নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছিলেন পাঠাগার। পাঠাগারটি ছিল তার অত্যন্ত প্রিয়। সেনাদের আগুনে পুড়ে গেছে সেই গ্রন্থশালা। ছাই হয়ে গেছে তার স্বপ্ন, লেখক হওয়ার স্বপ্ন।

আরো পড়ুন: আরাকান ও রোহিঙ্গা মুসলমান : সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত (পর্ব - ১ )

রো মাইয়ু আলী বর্তমানে থাকেন কক্সবাজারের কুতুপালং আশ্রয় ক্যাম্পে। সেখান থেকে আলজাজিরার মাধ্যমে লেখা এক খোলা চিঠিতে রাখাইন সঙ্কটের জন্য তিনি দায়ী করেছেন মিয়ানমারের নোবেলবিজয়ী নেত্রী অং সান সু চি কে। তার কাছে অনেকগুলো প্রশ্ন রেখে রোহিঙ্গা তরুণ মন্তব্য করেছেন, ইতিহাসে একজন সামরিক জান্তার সমান্তরালেই উচ্চারিত হবে সু চির নাম।

এখানে চিঠির বিস্তারিত উপস্থাপন করা হলো :

যে বছর আপনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান, আমার জন্ম সেই বছরেই। আমাদের দেশের (মিয়ানমার) যে কারো পাওয়া সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার এটি। রাখাইন রাজ্যের মংডুতে আমার জন্ম। আমরা সবাই সেদিন আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলাম। মনে হয়েছিল যেন আমরা নিজেরাই পুরস্কার পেয়েছি। বছরের পর বছর সামরিক জান্তার অত্যাচারে নিষ্পেষিত মানুষ আপনার পুরস্কার পাওয়ায় নতুন করে উৎসাহ পায়, স্বপ্ন দেখা শুরু করে। ওই ঘটনায় প্রথমবারের মতো আমরা মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে আমরা গর্ববোধ করেছিলাম। প্রথমবারের মতো মনে হয়েছিল, আমরা মিয়ানমারের মানুষ।

সব সময় আপনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতেন আমার দাদা। আপনার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির লোকজন যখন আমাদের বাড়িতে আসত, তখন তিনি (দাদা) সবচেয়ে ভালো ছাগল ও গরু জবাই করতেন। তিনি খুব উৎসাহভরে তাদের স্বাগত জানাতেন। নির্যাতিতদের পক্ষে আপনার সোচ্চার কণ্ঠস্বর আকৃষ্ট করেছিল আমার মাকেও। বাবা ও প্রিয় দাদা চেয়েছিলেন যেন আমি আপনার পথ অনুসরণ করি।

২০১০ সালে সামরিক বাহিনী যখন আপনাকে গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি দেয় তখন আমরা খুবই আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু মাত্র সাত বছরের মাথায় আমরাই, সেই রোহিঙ্গারা, বর্বরতা ও গণহত্যার শিকার হলাম। তাও আবার আপনারই হাতে। ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর আপনি দল থেকে মুসলিম নেতাদের (প্রতিনিধি) বের করে দিলেন। তখনই আপনার রাজনৈতিক ভীরুতা উন্মোচিত হয়। কয়েক মাসের মধ্যেই আপনার প্রশাসন উত্তর রাখাইন রাজ্যে ‘জাতিগত নিধন’ অভিযান শুরু করল। এই কয়েক মাসে অসংখ্য বেসামরিক লোককে হত্যা করা হয়েছে এবং অসংখ্য নারী সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বিশ্বব্যাপী বিপুল নিন্দা সত্ত্বেও আপনি সেই অপরাধের কথা স্বীকার করেননি।

এমনকি আপনি আমাদের রোহিঙ্গা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। অথচ আমরা যুগের পর যুগ এই রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে আসছি এবং ‘রোহিঙ্গাই’ আমাদের জাতিগত পরিচিতি। গত ২৫ আগস্ট সহিংসতা শুরুর পর থেকে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে এবং ১৫ হাজারের বেশি বাড়িঘর জ্বালিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রবিহীন নাগরিক

মিয়ানমারের সংবিধানে যেকোনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, যারা ১৮২৩ সাল থেকে মিয়ানমারে বসবাস করে আসছে, তারা মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু রহস্যজনকভাবে এ সংজ্ঞায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভ্ক্তু করা হয়নি। অথচ রোহিঙ্গারা প্রায় এক হাজার বছরধরে আরাকানে বসবাস করছে।

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা মুসলিমরা বর্তমানে রাষ্ট্রবিহীন নাগরিক। মিয়ানমারে তাদের ভোটাধিকার ও নাগরিক অধিকার-কোনোটিই নেই। এ বিষয়ে রোহিঙ্গাদের স্বার্থ রক্ষাকারী প্রধান সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) অভিমত, রোহিঙ্গাদের অধিকারবঞ্চিত করে মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া না হলে মিয়ানমারে বসবাসরত অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে সে দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার যুক্তি নেই?

আরএসও’র নেতারা জোর দিয়ে বলেন, ‘জাতিসঙ্ঘের সদস্যভুক্ত কোনো রাষ্ট্রের নিজ দেশের নাগরিকদের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী অভিহিত করে তাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির মাধ্যমে কাউকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া বা না দেয়া মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। জাতিসঙ্ঘের উচিত এ ধরনের দ্বৈতনীতি অবলম্বনকারী দেশকে জাতিসঙ্ঘের সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা।’‘

অং সান সু চি এবং সেনা প্রধানের অবস্থান

মিয়ানমারের কথিত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি এবং মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াং বলেছেন, রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমারের জনগোষ্ঠী নয়, তারা বাঙালি। তারা অতি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে আরাকানে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী।’

অং সান সু চি এবং সেনা প্রধানের বানোয়াট দাবী

অং সান সু চি এবং সেনাপ্রধান-এর দাবী সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট।নিম্নে তাদের যুক্তি খন্ডন করা হলো:

১। মিয়ানমারের সংবিধানে যেকোনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, যারা ১৮২৩ সাল থেকে মিয়ানমারে বসবাস করে আসছে, তারা মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু রহস্যজনকভাবে এ সংজ্ঞায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভ্ক্তু করা হয়নি। অথচ রোহিঙ্গারা প্রায় এক হাজার বছরধরে আরাকানে বসবাস করছে।

২। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯২৩ সালে যে আদমশুমারি হয়, তাতে দেখা যায় যে, আরাকানের জনসমষ্টির শতকরা ৩৬ ভাগ মুসলমান। এ থেকে অবাধেই অনুমান করা চলে যে, অতি সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে আরাকানে বাংলাভাষী মুসলমান যাওয়ার যে কথা মিয়ানমার সরকার বলছে, তা সত্য নয়।

৩। ১৭৮৫ সালে বার্মার রাজা বোদাপাউপিয়া আরাকান দখল করলে সেখান থেকে ব্যাপক হারে রাখাইন বা মগ ও রোহিঙ্গারা চট্টগ্রামে দেশান্তরী হয়। বোদাপাউপিয়ার বাহিনী আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্দয়ভাবে শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতন করে এবং সে সময় জীবন ও সম্ভ্রম রক্ষার্থে অনেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। বার্মা ব্রিটিশদের দখলে গেলে চট্টগ্রাম অঞ্চলে দীর্ঘদিন নির্বাসনে থাকা রোহিঙ্গারা আবার তাদের মাতৃভূমি আরাকানে প্রবেশ করে।

সুতরাং রোহিঙ্গারা অতি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে আরাকানে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী নয়।

সু চি-র প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ

গত নির্বাচনে মুসলমানরা মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি-কে ভোট দিয়েছিলো।নির্বাচনের আগে সু চি মুসলমানদের পক্ষে কথা বলেছিলো এবং বিভিন্ন ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো।বিশেষ করে রোহিঙ্গা মুসলমানরা বিশ্বাস করেছিলো, সু চি ক্ষমতায় আসলে তারা নাগরিকত্ব পাবে এবং শান্তিতে বসবাস করবে।কিন্তু সু চি রোহিঙ্গাদের হতাশ করেছে। তিনি আরাকানের মুসলমানদের বাঙ্গালী এবং সন্ত্রাসী বলছেন। তার ভয়, তিনি রোহিঙ্গাদের ন্যায্য ও আইনসঙ্গত অধিকারের প্রতি সমর্থন জানালে ব্যাপকহারে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ভোটপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবেন। তার এমন আচরণ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিরোধী।

আনান কমিশনের রিপোর্ট

রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশন ৮৮টি সুপারিশ করেছেন।

সুপারিশমালায় বলা হয়েছে—

  • রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান করতে হবে এবং মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে যৌথ যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে (বাংলাদেশ থেকে) নিরাপদে প্রত্যাবাসন করতে হবে।
  • ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী নাগরিকত্ব যাচাইপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে এরই মধ্যে নাগরিক হিসেবে যাচাই হওয়া ব্যক্তিদের সব ধরনের অধিকার ও স্বাধীনতা দিতে হবে।

  • মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইন আন্তর্জাতিক নিয়ম, নাগরিকত্ব এবং জাতিগোষ্ঠীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।

  • যারা মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি তাদের ওই দেশটিতে অবস্থানের বিষয়টি হালনাগাদ করে ওই সমাজের অংশ করে নিতে হবে।

  • জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবার অবাধ চলাচলের সুযোগ দিতে হবে।

  • রাখাইনে উন্নয়ন ও বিনিয়োগের পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীগুলোও উপকৃত হতে পারে।
  • মায়ানমারের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সকল গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সদস্যদের জড়িত থাকতে হবে।

  • অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুহারাদের শিবিরগুলো বন্ধ করে সমাজেই তাদের সম্পৃক্ত করার নীতি নিতে হবে।

  • প্রতিটি সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে সুসম্পর্ক সৃষ্টি এবং সমাজের সব সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

  • সীমান্ত ইস্যুসহ অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সুসম্পর্ক জোরদার করতে হবে।

  • সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমারকে একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে এবং মন্ত্রী পর্যায়ের কাউকে দায়িত্ব দিতে হবে।

আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন

সেপ্টেম্বর-২০১৭ মিয়ানমার সরকার বলেছিলো, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন করবে।কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না বরং মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করছে এবং মাইকিং করে বলছে, রোহিঙ্গারা যেন দ্রুত মিয়ানমার ছেড়ে চলে যায়। আর প্রতিদিন বাংলাদেশে হাজার হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করছে।

বৌদ্ধ ধর্মের মর্মবানী

‘অহিংসা পরম ধর্ম’, ‘জীব হত্যা মহাপাপ’—এসব নীতিকথা বলে গেছেন গৌতম বুদ্ধ। মহামতি বুদ্ধের অহিংস নীতিতে আকৃষ্ট হয়ে হিন্দু জন-অধ্যুষিত ভারতবর্ষের লাখ লাখ হিন্দু বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। বর্তমানে ধর্মনিষ্ঠ বৌদ্ধরা নিরামিষভোজী হলেও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বেশির ভাগ মানুষ উপাদেয় খাদ্য হিসেবে পরম তৃপ্তির সাথে জীবের গোশত ভক্ষণ করছেন। তারা রোহিঙ্গা মুসলমানদের নৃশংসভাবে হত্যা করছে, পশুকেও মানুষ এভাবে হত্যা করে না।‘

ভিক্ষু আশ্বিন উইরথুকে একজন বৌদ্ব ধর্মের অনুসারী এবং ভিক্ষু বা সংসার ত্যাগী ধর্মপ্রচারক। সে বৌদ্ধ ধর্মের মূলমন্ত্র বাদ দিয়ে প্রচার করছে উগ্র জাতীয়তাবাদ। তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আরাকানের মুসলিম হত্যা করছে।আশ্বিন উইরথুকের সাথে আরো অসংখ্য বৌদ্ধ ভিক্ষু মুসলমানদের হত্যা করছে। অথচ কোন ধর্মই হত্যাকে সমর্থন করে না।

গৌতম বুদ্ধ মানুষ হত্যা দূরে থাক, যেকোন জীব হত্যার বিপক্ষে ছিল। বৌদ্ধ ধর্ম অনুসরণ করে মিয়ানমারের বেশিরভাগ মানুষ। কিন্তু বাস্তবে আমরা কী দেখছি মিয়ানমারে? তাহলে কি মিয়ানমারের বৌদ্ধদের দৃষ্টিতে মুসলমানরা ‘জীব’-এর সংজ্ঞায় পড়ে না?

প্রতিবাদ

রোহিঙ্গাদের ওপর সাম্প্রতিক যে অত্যাচার, নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত হচ্ছে এটিকে বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা গণহত্যা বলে অভিহিত করছে। জাতিসঙ্ঘ বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী হিসেবে রোহিঙ্গাদের উল্লেখ করেছে। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। রোহিঙ্গাদের এই দুর্দশাকে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম সময়ের শরণার্থী সঙ্কট, মানবিক সঙ্কট ও মানবাধিকারের জন্য এক দুঃস্বপ্ন বলে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব আখ্যায়িত করেছেন।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, অভিযানের নামে মায়ানমারের সেনাবাহিনী খুন, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া, কুপিয়ে হত্যাসহ বর্বরতার চূড়ান্ত সীমাও অতিক্রম করেছে বলে। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংস্থাটি বলেছে, ইতোমধ্যে প্রায় ২৮৮টি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সংস্থাটি আরো জানায়, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মায়ানমারের সেনাবাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে।

রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার, নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড বিষয়ে যেসব মুসলিম রাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি সোচ্চার তারা হলো- তুরস্ক, ইরান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ। সার্কভুক্ত ক্ষুদ্র মুসলিম রাষ্ট্র মালদ্বীপ রোহিঙ্গা নিধন ও তাদের প্রতি অত্যাচার ও নিপীড়নের প্রতিবাদে মিয়ানমারের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। রুশ অধীনস্থ প্রজাতন্ত্র চেচনিয়ায় মিয়ানমারের নৃশংসতার বিরুদ্ধে যে বিক্ষোভ হয় তাতে পাঁচ লক্ষাধিক লোক সমবেত হয়েছিল। বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রেও ছোট-বড় বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।

সু চির নাম মুছে ফেলল অক্সফোর্ড

রোহিঙ্গা সংকটে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে অক্সফোর্ড কলেজ তাদের জুনিয়র কমনরুম থেকে সু চির নাম প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সেন্ট হিউ’স কলেজের শিক্ষার্থীরা কমনরুম থেকে সু চির নাম মুছে ফেলার পক্ষে ভোট দিয়েছেন বলে জানায় ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ান।

অক্সফোর্ডের এই আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কলেজে সু চি পড়াশোনা করেছিলেন। সেন্ট হিউ’র সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়েছে, রাখাইনে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সু চি সেনাদের সমালোচনা করছেন না, যা অগ্রহণযোগ্য। এক সময় তিনি যে নীতি ও আদর্শের কথা বলতেন এখন সেগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

রাখাইনে এখন কত রোহিঙ্গা আছে?

১৯৭০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮৪ শতাংশ (১৯ লাখ) রোহিঙ্গা মুসলিম আরাকান থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। আর মাত্র ১৬ শতাংশ রোহিঙ্গা দেশটিতে রয়েছেন। তারা পালিয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ভারত এবং গালফ ও এশিয়া প্যাসিফিক দেশগুলোতে শরণার্থী হয়েছেন।

ইউরোপিয়ান কমিশন এক রিপোর্টে বলেছে, ২০১৭ সালের শুরুর দিকেও রাখাইনে আনুমানিক ৮ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমের বসবাস ছিল। কিন্তু, গত ২৫ আগস্ট, ২০১৭ ইং রাখাইনে সেনা অভিযানের পর থেকে সংঘাতে ৭ লাখ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। বর্তমানে প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গা আরাকানে (রাখাইন প্রদেশে) রয়েছে।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৯০ ভাগই হলো নারী, শিশু ও বৃদ্ধ। জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মতে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিশু রয়েছে শতকরা ৬০ ভাগ।

যেসব দেশে রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে

মিয়ানমার সরকার কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন অনেক রোহিঙ্গা আছেন, যারা ৫০ ও ৬০-এর দশকে সৌদি আরব গিয়েছেন এবং সেখানে নাগরিকত্ব নিয়ে বসবাস করছেন। সবচেয়ে বেশি অবস্থান করছে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশ, বাংলা সাহিত্য এবং মায়ানমার

ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ গিয়েছে আরাকানে। তখন এই ক্ষেত্রে কোনো বাধাই ছিল না। চট্টগ্রাম থেকে সহজেই গিয়েছে আরাকানে। তারা আরাকানে ক্ষেত-খামার করেছে। আরাকানের অর্থনীতিকে করেছে সমৃদ্ধ। বার্মা ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসনমুক্ত হয়। এর পরে অবাধে আসা-যাওয়া বন্ধ হয়। ব্রিটিশ শাসনামলে বার্মা থেকে অনেকে আসতেন রংপুরে। রংপুর থেকে তারা তামাক কিনে নিয়ে যেতেন বার্মায়। বার্মায় তৈরি হতো রংপুরের তামাক পাতা দিয়ে বিখ্যাত বর্মি চুরুট। বার্মার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কখনোই এতটা বৈরী হয়ে ওঠেনি, যা সম্প্রতি হয়েছে।

মানুষ কেবল বাংলাদেশ থেকে আরাকানে যায়নি। আরাকান থেকেও বহু মানুষ এসেছে বাংলাদেশে। বোদপায়া ১৭৮৫ খ্রিষ্টাব্দে যখন আরাকান দখল করেন, তখন চাকমা ও মারমাদের পূর্বপুরুষ আসে বাংলাদেশে পালিয়ে। চাকমা ও মারমাদের বাংলাদেশ থেকে বিতাড়নে কোনো উদ্যোগ বাংলাদেশ সরকার গ্রহণ করেনি এবং করবেও না। সে এ ক্ষেত্রে সাধারণ আন্তর্জাতিক প্রথাকেই অনুসরণ করতে ইচ্ছুক। এ কারণে সে মারমাদের প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানে মারমা ভাষাকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। চাকমাদের কোনো নিজস্ব ভাষা এখন আর নেই। তাই বাংলা ভাষাতেই হচ্ছে তাদের প্রাথমিক শিক্ষা। অর্থাৎ বাংলা ভাষাতেই তারা শিখছে পড়তে, লিখতে ও গুনতে। কেবল তাই নয়, চাকমা কবিরা বাংলা ভাষাতেই কবিতা লিখেছেন এবং লিখছেন।

১৪৩২ সালে গৌড়ের সেনাপতি সিন্দি খান আরাকানের প্রাচীন রাজধানী ম্রোহংয়ে মসজিদ নির্মাণ করেন। ওই সময় থেকেই বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও স্বাধীন আরাকান রাজ্যের জনগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ধীরে ধীরে আরাকানে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং বাংলা ভাষা রাজ্যসভায় প্রাধান্য লাভ করে।

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে আরাকানের উল্লেখ রয়েছে রোসাং নামে।আরাকান রাজসভায় খ্রিষ্ট্রীয় সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে একাধিক মুসলমান বাংলাভাষী কবির কদর হয়েছিল। মহাকবি আলাওল, শাহ মুহম্মদ সগির, দৌলত কাজী ও মাগন ঠাকুরের মতো মধ্যযুগের বিখ্যাত কবিরা আরাকান রাজ্যের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন।দৌলত কাজী ‘‘সতী ময়নামতি’’ কাব্যের প্রস্তাবনায় লিখেছেন :

কর্নফুলী নদী পূর্বে আছে এক পুরী।

রোসাঙ্গ নগরী নাম স্বর্গ-অবতারী॥

তাহাতে মগধ বংশ ক্রমে বুদ্ধাচার।

নাম শ্রী সুধর্ম রাজা ধর্মে অবতার॥

প্রতাপে প্রভাত ভানু বিখ্যাত ভুবন।

পুত্রের সমান করে প্রজার পালন॥

একজন ইসরায়েলি লেখক Moshe Yegar তাঁর ‘Between Integration and Secession : The Muslim Communities of the Southern Philippines, Southern Thailand and Western Burma/Myanmar’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, মুসলমানরা বার্মায় তাদের বসতি স্থাপনের প্রথম থেকেই রাজকীয় উপদেষ্টা, প্রশাসক, বন্দর কর্তৃপক্ষ, মেয়র, স্থানীয় চিকিৎসকসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে।

দুটি নির্মম হত্যাকান্ড

দিল্লির সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলের প্রথম দিকে আরাকানে দুটি নির্মম হত্যাকান্ড ঘটে, যেখান থেকে ইতিহাসে মগের মুল্লুক বাগধারার প্রচলন হয়।ঘটনাটি নিম্নরূপ:সিংহাসন নিয়ে সম্রাট শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ শুরু হয়।এ যুদ্ধে সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছে পরাজিত হয়ে শাহ সুজা সপরিবারে বাংলায় পালিয়ে আসেন। কিন্তু আওরঙ্গজেবের সুবেদার মীর জুমলার সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তিনি নোয়াখালী হয়ে তৎকালীন আরাকান রাজ্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করেন এবং সেখান থেকে আরাকান রাজার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। শাহজাদা শাহ সুজা সপরিবারে মক্কায় হজ পালন ও স্বেচ্ছানির্বাসনে যাওয়ার ব্যাপারে রাজার সাহায্যের আশ্বাস পান। অবশেষে তিসি আরাকান রাজার সাথে সাক্ষাৎ করতে ৫০ হাজার সৈন্য নিয়ে রাজধানী মংডুতে পৌঁছেন। রাজার প্রধান সেনাপতি ছিলেন জয়েনউদ্দিন।আর সভাকবি ছিলেন বাংলা ভাষার মহাকবি আলাউল।

চক্রান্ত অনুযায়ী শাহ সুজাকে সপরিবারে রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে তার সফরসঙ্গী সৈন্যসামান্ত ও সমর্থকদের শহরের বাইরে আশ্রয় প্রদান করা হয়। আরাকান রাজা সান্দা থুঢাম্মার নির্দেশে গভীর রাতে জয়েনউদ্দিন এবং তার ভাইয়ের নেতৃত্বে প্রাসাদের ভিতর ও বাইরে যুগপৎ আক্রমণ চালিয়ে ৫০ হাজার বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই কালরাত্রিতে নির্বিচারে গণহত্যা, ধর্ষণ এবং লুটতরাজ চালানো হয়। শাহ সুজা কোনোমতে প্রাণ নিয়ে ভারতের ত্রিপুরায় পালিয়ে যান। আরাকান রাজা মোগল শাহজাদী গুলরুখ বানুকে ধর্ষণ করে।রাজা কর্তৃক ধর্ষিত হয়ে শাহজাদী আত্মহত্যা করেন।

সম্রাট আওরঙ্গজেব উপরোক্ত ঘটনা শোনার পর যারপরনাই ব্যথিত হন। তিঁনি ক্ষুব্ধ হয়ে বাংলার নবনিযুক্ত শাসক শায়েস্তা খানকে নির্দেশ পাঠান আরাকান রাজ্যের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান এবং প্রতিশোধ গ্রহণ করার জন্য। শায়েস্তা খাঁর পুত্র বুজুর্গ উমেদ খান এক নৌযুদ্ধে আরাকান রাজকে পরাজিত করে (১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে) চট্টগ্রাম দখল করে নেন এবং চট্রগ্রামকে মোগল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। অন্যদিকে মোগল সেনারা আরাকানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালায়। লাখ লাখ আরাকানি নাগরিক চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং হাজার হাজার আরাকানি রোহিঙ্গা, মগ প্রভৃতি সম্প্রদায়ের লোক আরাকানি জাতীয়তাবাদীতে উদ্বুদ্ধ হয়ে মোগলদের কাছ থেকে চট্টগ্রাম পুনরুদ্ধার করার জন্য গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে যা ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। অন্যদিকে কিছু আরাকানি নাগরিক পর্তুগিজ জলদস্যুদের সঙ্গে মিলিত হয়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক লুটতরাজ, ডাকাতি, অপহরণ ইত্যাদি অপরাধ চালাতে থাকে, যাদেরকে ইতিহাসে মগ দস্যু বা আরাকানি দস্যু বলা হয়। বাংলার নবাব আলীবর্দী খাঁ অত্যন্ত শক্ত হাতে পর্তুগিজ জলদস্যু এবং আরাকানি জলদস্যুদের দমন করেন। ১৬৬৬ সালের জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম বিজয় সম্পন্ন হয়।

বাংলাদেশে কোথায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবির

রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে টেকনাফ, উখিয়া এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো হলো- (১) মোছনি-টেকনাফ (২) অং চি প্রাং (হোয়াং ক্যাং)-টেকনাফ (৩) কুতুপালং-উখিয়া, (৪) বালুখালী-উখিয়া, (৫)ময়নারগোনা-উখিয়া (৬)নাইক্ষ্যংছড়ি-বান্দরবান। তন্মধ্যে কুতুপালং-এ সবচেয়ে বেশি।

সীমান্ত পথে অনুপ্রবেশ

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসছে কক্সবাজারের উখিয়ার আঞ্জুমানপাড়া ও পালংখালী সীমান্ত দিয়ে এবং টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ দিয়ে। এ ছাড়া বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম, তুমব্রু, চাকডালা, আশারতলী, ফুলতলা ও লিমুছড়ি সহ ছয়টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে।

কামাল ৭০০ নিখোঁজ রোহিঙ্গা শিশুর বাবা-মাকে খুঁজে দিল

২৫ আগষ্ট, ২০১৭ থেকে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা শুরুর পর অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। পালিয়ে আসতে গিয়ে অনেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন তাদের প্রিয়জন থেকে। এমতাবস্থায়, কামাল হোসেন নামে আরেকজন রোহিঙ্গা শরণার্থী স্ব-উদ্যোগে সহায়তা করছেন হারিয়ে যাওয়া শিশুদের তাদের বাবা-মায়ের সাথে মিলিত হতে। আগস্টের ২৭ তারিখ থেকে এ পর্যন্ত (অক্টোবর-২০১৭ ইং) প্রায় সাড়ে সাতশো পরিবারকে তাদের ছেলেমেয়েদের সাথে পুনরায় মিলিত হতে সহায়তা করেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক একটি ত্রাণ সংস্থায় গার্ডের কাজ করেন কামাল হোসেন।

প্রায় কুড়ি বছর ধরে তিনি নিজেই উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের বাসিন্দা। ১৯৯৮ সালে তিনি মায়ানমার থেকে শরণার্থী হয়ে চলে এসেছিলেন বাংলাদেশে। তিনি যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন তখন তার বয়স ছিল নয় বছর। নাসাকা বাহিনী তাকে দিয়ে কুলির কাজ করানোর চেষ্টা করলে তিনি পালিয়ে চলে এসেছিলেন বাংলাদেশে। তিনি এসেছিলেন একাই বাবা মাকে না জানিয়ে এবং ক্যাম্পে থাকার জন্য নথিবদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি মানুষ হয়েছিলেন অপরিচিত এক রোহিঙ্গার আশ্রয়ে। এর কয়েক বছর পর তার বাবা মা বাংলাদেশে পালিয়ে এলেও বহুদিন বাবা মায়ের খোঁজ পাননি।পরে বাবা মাকে খুঁজে পান কামাল।

কামাল হোসেন বলেছেন, এত লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রথমবারের মত বাংলাদেশে এসে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। এরা আসতেছে কিন্তু গ্রাম চিনে না, পথঘাট চিনে না। তারা কখনো বাংলাদেশে আসে নাই। এদিক ওদিক যেতে গিয়ে অনেক বাচ্চার থেকে আম্মা হারিয়ে যাচ্ছে, কারো আত্মীয় স্বজন হারিয়ে যাচ্ছে। খুঁজে পাচ্ছে না।

কামাল হোসেন বলছিলেন সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল বাংলাদেশে ঢোকার পর একদিন তিনি দেখেন তার অফিস গেটের সামনে দাঁড়িয়ে এক মহিলা কাঁদছেন। আমি জিজ্ঞাস করার পর উনি বলেছেন আমার একটা ছেলে আজকে দুদিন ধরে হারিয়ে গেছে, আমি খুঁজে পাচ্ছি না।

সারাদিন ডিউটি করার সময় কামাল চিন্তা করছে, অনেক মানুষ রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিচ্ছে, টাকা-পয়সা-জিনিসপত্র দিচ্ছে, তার তো কোন সম্পদ নাই। তাহলে সে যদি মাইকিং করে হারিয়ে যাওয়া বাচ্চাগুলো তাদের মা-বাপকে খুঁজে দিতে পারে, তাহলে যারা ত্রাণ দিচ্ছে, তাদের মতো সেও সোয়াব পাবে।

এরপর ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে কামাল হারিয়ে যাওয়া পরিবারগুলোকে আবার মিলিয়ে দেবার জন্যে মাইকিং শুরু করেন। তিনি বলেছেন তার নিজের পকেট থেকে বেতনের ৩০০০ টাকা দিয়ে মাইকিং করার জন্যে চার দিনের জন্য একটা মাইক ভাড়া করেছেন।

চারদিন পর যখন কামাল মাইক ফেরত দেবার জন্য যাচ্ছিল, তখন জাতিসংঘের একটি সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) তার সঙ্গে কথা বলল-আমরা মাইক গুলোর ভাড়া দেব কিন্তু আপনি একটু হেল্প করতে পারেন কীনা?’ তাদের প্রস্তাবে রাজী হয়ে গেলেন কামাল।এরপর তিনি সেখানে একটা সাইন বোর্ড তৈরি করে টাঙালেন, হারানো পরিবারদের মিলিয়ে দেবার জন্য।আর প্রতিদিন মাইকিং করেন।

তিনি বলেছিলেন কোনো ছেলে হারিয়ে গেলে তিনি তাকে তার নাম, তার আব্বা-আম্মার নাম, তার বয়স এবং গ্রামের নাম জিজ্ঞেস করেন। এসব নানা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে তারপর মাইকিং করতে থাকেন।

২৭ সেপ্টেম্বর থেকে মাইকিং করে এ পর্যন্ত (অক্টোবর-২০১৭) ৭৩৭ জন হারিয়ে যাওয়া বাচ্চাকে তিনি বাবা-মার হাতে তুলে দিয়েছেন। কঠোর যাচাই-বাছাইয়ের পর তবেই তিনি বাচ্চাদের ফিরিয়ে দেন সঠিক বাবা-মায়ের কাছে।

কামাল হোসেন বলেন, যখন একটা ছেলে হারিয়ে যায়, তখন মাইকিং করার পরে মা বাবা যখন ফিরে আসে আমার কাছে, তখন তাদের কত আনন্দ হয়, ওই সময় আমারও আনন্দ লাগে। তিনি আরো বলেন, হারিয়ে যাওয়া বাচ্চাটাকে সঠিক বাবামায়ের কাছে তিনি যে ফিরিয়ে দিতে পারছেন, এটা তার জন্য একটা বিরাট আনন্দের অনুভূতি।

পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কষ্ট তিনি জানেন আর ব্যক্তিগত সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এখন হারিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের বাবা মায়ের হাতে তুলে দেওয়ার কাজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন কামাল হোসেন।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা

মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আন্তর্জাতিক চাপে এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার সরকার আলোচনার ফলে রোহিঙ্গাদের একটা অংশ ফিরেও নিয়েছিল মিয়ানমারে। তারপরও ৫ লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে থেকে যায়। ২০১৭ সালে এসেছে ৭ লাখ। এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে মোট ১২ লাখ।

অতীতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আগমন এবং মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া

  • মিয়ানমার সরকার ১৯৭৩ সালে উত্তর আরাকানে Major Aung Than operation ও ১৯৭৪ সালে Sabe operation নামে রোহিঙ্গা উচ্ছেদ অভিযান চালায়। ফলে অসংখ্য রোহিঙ্গা জীবন রক্ষার্থে যুদ্ধবিধ্বস্ত দুর্ভিক্ষপীড়িত বাংলাদেশে এসে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করে। সে সময় তৎকালীন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃঢ় অবস্থান ও চরমপত্রের কারণে বার্মা সরকার বিতাড়িতদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়।

  • মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ১৯৭৮ সালে ‘কিং ড্রাগন অপারেশন’ নামে রোহিঙ্গা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। এতে দুই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আগমন ঘটে। রোহিঙ্গাদের ব্যাপকহারে দেশান্তরী হওয়ার বিষয়টি জাতিসঙ্ঘ ও বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রের সহানুভূতি অর্জনে সক্ষম হয় এবং জাতিসঙ্ঘের মধ্যস্থতায় অল্প কিছু রোহিঙ্গা আরাকানে প্রত্যাবাসন করে।

  • ১৯৯১ সালে আরাকান (রাখাইন প্রদেশ) থেকে কক্সবাজারে প্রথম ২ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারে আসে। তাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য জাতিসঙ্ঘ এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে খোলা হয় আশ্রয়শিবির। ১৯৯২ সালে তদানীন্তন মিয়ানমার সরকার শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় এবং প্রত্যাবাসন শুরু হয়।

  • ১৯৯২ সালের ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের যৌথ ঘোষণা অনুসারে ১৯৯২ থেকে ২০০৫ সালের জুলাই পর্যন্ত দুই লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৫ জনকে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

বর্তমানে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিবে কিনা

মিয়ানমার সরকার কখনো বলছে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশী, তাদের ফেরত নিবে না। আবার কখনো বলছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত নিবে, তবে নাগরিকত্ব দিবে না। ৩১ অক্টোবর, ২০১৭ তারিখ মিয়ানমার সরকার বলেছে, প্রতিদিন ৩০০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে মিয়ানমার সরকার। তুংপিও লিতওয়ে এবং এনগা খু ইয়া গ্রামের দুটি তল্লাশি চৌকির মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে। এরপর পুনর্বাসন করা হবে মংডু শহরের দার গি জার গ্রামে। এ প্রক্রিয়ায় ১৯৯২ সালে স্বাক্ষরিত দুই দেশের মধ্যকার শরণার্থী প্রত্যাবাসন চুক্তির চারটি প্রধান মূলনীতির অধীনে শরণার্থীদের সূক্ষ্ম নিরীক্ষণের প্রয়োজন আছে বলে উল্লেখ করেছে মিয়ানমার। দৈনিক ৩০০ জন রোহিঙ্গা মিয়ানমার গেলে বাংলাদেশের সকল রোহিঙ্গা মিয়ানমার যেতে সময় লাগবে ১০ বছর। মূলতঃ এমন মন্তব্য, রোহিঙ্গাদের ফেরৎ না নেয়ার একটা অপকৌশল।

সু চির বক্তব্য (অক্টোবর-২০১৭), ১৯৯২ সালের ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের যৌথ ঘোষণা অনুসারে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিবে মিয়ানমার।

১৯৯২’র যৌথ ঘোষণায় মিয়ানমারের প্রতিশ্রুতিতে শুভঙ্করের ফাঁকি স্পষ্ট। ওই ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে নিবন্ধিত রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের বৈধ কাগজপত্রসহ ফিরতে পারবে মিয়ানমারে।কিন্তু ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে জাতিগত নিধনের মুখে পালিয়ে আসা কয়েক লাখ রোহিঙ্গার সেরকম কাগজপত্র নেই। যুদ্ধ বা সহিংসতার মতো পরিস্থিতিতে তারা প্রাণভয়ে পালিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে।

এমতাবস্থায়, রোহিঙ্গাদের আরাকানে ফেরা অনিশ্চিত।

৩৬ হাজার রোহিঙ্গা এতিম শিশু শনাক্ত

মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৩৬ হাজার ৩৭৩ এতিম শিশু শনাক্ত করা হয়েছে। শূন্য থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত রোহিঙ্গা এতিম শিশুদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এতিম শিশু শনাক্তের ক্ষেত্রে কারো মা আছে, বাবা নেই। কারো বাবা আছে, মা নেই। আবার কারো বাবা-মা কেউ নেই। অথবা মা, বাবা থাকার পরও পরিত্যক্ত শিশুদের এতিম বলেই গণ্য করা হয়েছে। পরে এসব রোহিঙ্গা এতিম শিশুকে সুরক্ষার মাধ্যমে সেবাযত্ন দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

সমাজসেবা অধিদফতর কক্সবাজার-এর উখিয়া-টেকনাফের ১২টি অস্থায়ী ক্যাম্পে ‘রোহিঙ্গা এতিম শিশু সুরক্ষা প্রকল্পে’ জরিপের প্রাথমিক কাজ শেষ করেছে। ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ থেকে শুরু হওয়া এ জরিপের প্রাথমিক কাজ ১০ নভেম্বর, ২০১৭ শেষ হয়।

এতিম শিশু রুবিনার গল্প

রুবিনা (৭) নামে এক এতিম শিশুকন্যা কুতুপালং (লম্বাশিয়া) শরণার্থী শিবিরে এক ঝুপড়িতে একমাত্র ভাইয়ের সাথে বসবাস করে। মংডু প্রাংপ্রু গ্রামের আব্দুল্লাহ ও জুনুবাহারের সন্তান রুবিনা। সাত বছরের রোহিঙ্গা এতিম শিশু রুবিনা মাতৃভাষায় জানায়, ‘আধা রাতিয়া ঘুমত্ চমকি চমকি উড়ি। ঘুমত্ মাম্মা আঁরে ডাকে। বাবারে গুলি মারেদ্দে দেখিলে ঘুম ভাঙ্গি যা-গই।’ অর্থাৎ মধ্যরাতে ঘুমের মধ্যে চমকে উঠি। ঘুমে মা এসে আমাকে ডাকেন। বাবাকে গুলি করে হত্যার দৃশ্য দেখে ঘুম ভেঙে যায়।

বাবা-মাকে চোখের সামনে মারা যেতে দেখেছে রুবিনা। গত কুরবানির ঈদের দুই দিন পর তার বাবাকে মিলিটারি গুলি করে হত্যা করে। তার মা জুনুবাহার স্বামী শোকে পাথর হয়ে যান। মগ, বৌদ্ধ ও মিলিটারি মিলে তাদের গ্রাম পুড়িয়ে দিলে অন্য গ্রামে তারা এক মাস অবস্থান করে অবশেষে বাংলাদেশে চলে আসে।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার এক দিন আগে রুবিনার মা জুনু বাহার মারা যান। বাবা-মায়ের মৃত্যুর দৃশ্য বলতে গিয়ে এক রকম চুপ হয়ে যায় রুবিনা। শিশু রুবিনার চোখেমুখে এখনো ভয় ও আতঙ্ক কাজ করছে।

রুবিনার একমাত্র বড় ভাই জানায়, এখনো তার ছোটবোন ঠিকমতো খেতে চায় না। কারো সাথে তেমন কথা বলে না। একা একা বসে থাকে। মাঝ রাতে ঘুমের মধ্যে কান্নাকাটি করে। চিৎকার করে জেগে ওঠে। ছোটবোনের অস্বাভাবিক আচরণে সে চিন্তিত। বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে রুবিনার মতো হাজারো এতিম শিশু অবস্থান করছে।

খাদ্য খেলে ক্ষুধা চলে যায়, ওষুধে শরীরের ক্ষত সেরে যায়। কিন্তু হৃদয়ের ক্ষত সহজেই সেরে ওঠে না। সারা জীবন দুর্বিষহ স্মৃতি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করবে রুবিনাদের। আর বিশ্ব সভ্যতা পশুর মতো চেয়ে চেয়ে দেখবে রুবিনাদের।

রোহিঙ্গা নারীদের অধিক সন্তান জন্মদান

প্রতিদিন রোহিঙ্গা শিবিরে নারীরা সন্তান প্রসব করছে। প্রতিটি দম্পত্তির রয়েছে ৫-৮ টি সন্তান। অধিক সন্তানের কারণ হলো :

১। মিয়ানমার সরকার ১৯৮২ সালে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার পরে তারা সরকারী সব ধরনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত।ফ্যামিলি প্লানিং বা পরিবার পরিকল্পনা থেকেও বঞ্চিত।

২। মিডিয়ায় সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গারা বলেছে, বর্মী সেনারা প্রায়ই মুসলিম গ্রামগুলোতে ঢুকে নারীদের ধর্ষণ করে। ধর্ষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে নারীরা প্রায় সারা বছর গর্ভবতী থাকে।

৩। অধিক সন্তান জন্মদানের পেছনে আর একটি কারণ হলো অধিকার আদায়। জনসংখ্যা বেশি হলে সম্মিলিতভাবে আন্দোলন করে অধিকার আদায় করতে পারবে, এরূপ ধারণা থেকেও তারা বেশি সন্তান জন্ম দেয়।

৪। রোহিঙ্গারা গরীব, খেটে খাওয়া মানুষ।গরীব হওয়ার কারণে সাধারণতঃ চর্বিযুক্ত খাবার কম খায়।চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে, দরিদ্র মানুষের প্রজনন ক্ষমতা বেশি থাকে।

৫। স্বাস্থ্যকর আবহাওয়া এবং খাদ্যের কারণে ওদের সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা বেশি। যারা বেশি মাছ খায় তাদের প্রজনন ক্ষমতা বেশি।

৬। বাল্য বিবাহ। অভিবাবকরা অল্প বয়সে সন্তানদের বিবাহ দেয়।

৩৩ জন এইডস ভাইরাস রোগী

উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে (১৮ অক্টোবর পর্যন্ত) এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। শনাক্তদের মাঝে ১৮ জন নারী, ১০ পুরুষ এবং ৫ জন শিশু। এদের মাঝে এক নারী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এইডস রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে আশা’র আলো সংস্থা ।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শানীন আবদুর রহমান চৌধুরী বলেন, প্রতিবেশী মিয়ানমারে প্রতি এক হাজার মানুষের মধ্যে ৮ জন এইচআইভি পজিটিভ বলে বিবেচিত হয়।

জানা গেছে, ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত কক্সবাজারে ১৬৭ জন এইডস রোগী পাওয়া গেছে। ৫৪ জনই রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিরা কক্সবাজার, চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

জাতিসংঘের এইডস বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউএনএইডসের সর্বশেষ তথ্যমতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মিয়ানমার এইচআইভি-এইডস রোগের দিক থেকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। দেশটিতে আড়াই লাখের বেশি এইডস রোগী আছে। মোট জনসংখ্যার প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দশমিক ৮ ভাগ এইডস আক্রান্ত।

সেখানে ইনজেকশন সিরিঞ্জের মাধ্যমে, যৌনকর্মীদের এবং সমকামীদের মাধ্যমে এইডস সংক্রমিত হয়েছে । এছাড়া রাখাইন প্রদেশে প্রচুর প্রবাসী বিদেশ থেকে এইডস এর জীবাণু বহন করেন। তাদের মাধ্যমে তাদের স্ত্রী এবং সন্তানের শরীরেও এইডস ছড়িয়ে পড়ে।

রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছে

রোহিঙ্গারা রাষ্ট্রবিহীন হওয়ায় মিয়ানমার থেকে বৈধভাবে তাদের পক্ষে অন্য কোনো রাষ্ট্রে যাওয়া সম্ভব হয় না। তাই অনেক রোহিঙ্গা মুসলিম অবৈধভাবে বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী হয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। বাংলাদেশের কিছু অসাধু রাজনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তা অবৈধ অর্থে বশীভূত হয়ে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট প্রদান ও বিদেশ গমনে সহায়তা করে আসছেন।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘শরণার্থী’ ক্যাম্প বাংলাদেশ

মিয়ানমার সরকার কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বারো লাখ (৫ লাখ+৭ লাখ) রোহিঙ্গাদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘শরণার্থী’ ক্যাম্প বানাবে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের স্থান দেয়ার জন্য কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে এই রোহিঙ্গা ক্যাম্প করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এজন্যে সরকার ৩ হাজার একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অবস্থা

ভয়ংকর নির্যাতন ও নিপীড়ন সহ্য করে পালিয়ে এসে যারা একটুখানি বাঁচার জন্যে আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের অধিকাংশও এখন নতুন করে নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছেন গুটিকয়েক অমানুষের দ্বারা। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা হয়রানির চিত্র নিম্নে প্রদত্ত হলো:

  • রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে শুরু থেকেই মাঠে নেমেছে দালালচক্র।রোহিঙ্গাদের ট্রলারে/নৌকায় করে আরাকান থেকে উখিয়া কিংবা টেকনাফ-এর শাহপরির দ্বীপে নিয়ে আসতে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।
  • রোহিঙ্গারা উখিয়া/টেকনাফ আসার পর বাংলাদেশী দালালের খপ্পরে পড়ে নামমাত্র টাকায় তাদের লক্ষ লক্ষ রুপি বিক্রি করে দিচ্ছে। কিছুদিন আগের এক নিউজ, এক বাংলাদেশী আরাকানের এক ধনাঢ্য পরিবারের ২ লক্ষ মিয়ানমার রুপী ক্রয় করেছে মাত্র ২০০০ টাকায় । তাদের এই বিপদকে পুঁজি করে দালালচক্র হাতিয়ে নিচ্ছে তাদের সহায় সম্বল। এই সুযোগে কোন কোন দালাল কোটি টাকার মালিকও হয়েছেন।
  • একদল মানুষরূপী জানোয়ার সুন্দরী রোহিঙ্গা যুবতীদের পতিতাবৃত্তি করার জন্যে বিভিন্ন হোটেলে নিয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজার ও বন্দরনগরী চট্রগ্রাম অঞ্চলসহ আরও কয়েকটি জেলাতে এদেরকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে পতিতাবৃত্তি করার জন্যে। তাদের বেশিরভাগই ১৩ থেকে ২৫ বছর বছর বয়সী মহিলা।
  • রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশের পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে ১০-২০ হাজার টাকার বিনিময়ে। শরনার্থী কার্ড দিচ্ছেন টাকার বিনিময়ে।

রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের হয়রানির কিছুচিত্র থাকলেও সহযোগিতা ও ভালোবাসার দৃষ্টান্ত চোখে পড়ার মতো। সরকার ২০১২ সালে রোহিঙ্গাদের প্রশ্রয় না দিলেও ২০১৭ সালে প্রশ্রয় দিয়ে মানবতার পরিচয় দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, মসজিদ, মাদ্রাসা এবং সরকারী-বেসরকারী অফিসের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের সহায়তা করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা এবং সহযোগিতায় রোহিঙ্গারাও অবিভূত এবং কৃতজ্ঞ।

দুর্নীতির আশংকা

রোহিঙ্গাদের সাহায্য করার জন্যে প্রচুর বিদেশী সাহায্য আসছে বাংলাদেশ সরকার এবং এনজিও-দের কাছে।ইতোমধ্যে ইউরোপীয় দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ সাহায্য সিঠিকভাবে ব্যবহার হলে রোহিঙ্গাদের আর্থিক সমস্যা থাকবে না। তবে অনেকে দুর্নীতির আশংকা করছেন।

সমাধান

  • রোহিঙ্গাদের পক্ষে বাংলাদেশ সরকারের আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক প্রচেস্টা অব্যাহত রাখবে ।এজন্যে একজন কূটনীতিককে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দিতে হবে।
  • আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে হবে। এ কাজটি যে কোন মুসলিম দেশ করতে পারে।
  • মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্যে ওআইসি-কে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে ওআইসি-র কোন ভূমিকা চোখে পড়েনি।
  • মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী দেশগুলো রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে নিশ্চুপ।
  • রোহিঙ্গাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।তাদের ভেতর থেকে শক্তিশালী নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। রোহিঙ্গারা ষাটের দশক থেকে মধ্যপ্রাচ্য এবং অষ্ট্রেলিয়াসহ উন্নত দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তারা ওখানের নাগরিক। তাদের মধ্যে অনেকে শিক্ষিত এবং স্বচ্ছল জীবন-যাপন করছে।প্রবাসী রোহিঙ্গাদের একতাবদ্ধ হতে হবে এবং তাদের ভেতর থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে।

  • সাবেক বিডিআর প্রধান জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান বলেছেন, নিজ দেশের অস্তিত্ব রক্ষার নিমিত্তে বাংলাদেশের উচিৎ ২ লক্ষ কিংবা ততোধিক রহিঙ্গাকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা দিয়ে রোহিঙ্গাদের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান ও দৃঢ় সমর্থন দিয়ে রহিঙ্গাদের তাদের নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করা।

সূত্রঃ

১। রোহিঙ্গা ট্র্যাজেডি সংকটের অবনতি না অবসান - ড. মুহাম্মদ ইউনূস

২। আরাকানে রোহিঙ্গা নিধন - এবনে গোলাম সামাদ

৩। রহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হতে পারে - জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান

৪। রোহিঙ্গা বিপর্যয়ে আমাদের করণীয় - সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক

৫। রোহিঙ্গারা নিজভূমে অধিকারবিহীন! - ইকতেদার আহমেদ

৬। মগের মুল্লুক থেকে উ মং মং খা বলছি! - গোলাম মাওলা রনি

৭। বঙ্গে মগ-ফিরিঙ্গি ও বর্গির অত্যাচার - মুহম্মদ আবদুল জলিল

৮। আরাকান ও মুসলমান : সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত - আকাশ

৯। বিবিসি বাংলা 

১০। জাতীয় দৈনিক পত্রিকা

১১। উইকিপিডিয়া


Comments

Popular posts from this blog

সোশ্যাল মিডিয়ার সুবিধা এবং অসুবিধা/সোশ্যাল মিডিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

সমসাময়িক জীবনে ব্যক্তিগত যোগাযোগের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ - একটি অনিবার্য উপাদান, বিশেষ করে যারা ব্যস্ত জীবন যাপন করেন এবং তথ্য আপডেটের জন্য এটির উপর নির্ভরশীল। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে লোকেরা বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে, পরিবারের সাথে কথা বলতে পারে এবং অসংখ্য প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সমস্ত ঘটনা সম্পর্কে আপডেট থাকতে পারে। সবচেয়ে সাধারণ অনলাইন ক্রিয়াকলাপগুলির মধ্যে একটি হল সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা। একটি সমীক্ষা অনুসারে ২০২১ সালে প্রায় ৮২% আমেরিকানদের এক বা একাধিক সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইটে একটি প্রোফাইল ছিল, যা আগের বছরের ব্যবহারের হার থেকে ২% বেশি। ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২২৩ মিলিয়ন মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করত। সোশ্যাল মিডিয়ার সুবিধা/সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো দিক কানেক্টিভিটি কানেক্টিভিটি সোশ্যাল মিডিয়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সুবিধাগুলির মধ্যে একটি। এটি যেকোনো সময়, সর্বত্র অগণিত ব্যবহারকারীকে লিঙ্ক করতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া এবং এর সংযোগের মাধ্যমে তথ্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে, যা মানুষের একে অপরের সাথে যোগাযোগ করা সহজ...

কিওয়ার্ড কি, কত প্রকার, কিওয়ার্ড রিসার্চ কিভাবে করে ?

অনলাইন ক্ষেত্রে কিওয়ার্ড (keyword) বিশাল একটা জিনিস কারন একটা সামান্য keyword আপনার জীবন কল্পনাহীন পরিবর্তন করে দিতে পারে যদি আপনি ঠিকঠাক ভাবে খুঁজে পান। সুতরাং সবাই চায় সঠিক এবং ভালো কিওয়ার্ড নিয়ে কাজ করতে । আমাদের, keyword নিয়ে বিস্তারিত যেমন – কিওয়ার্ড কি, কিওয়ার্ড কত প্রকার, কিওয়ার্ড রিসার্চ কিভাবে করে, কিওয়ার্ড স্টাফিং কি জেনে নেওয়াটা অনেক বেশি জরুরি সাথে জেনে নেওয়া দরকার কিওয়ার্ড রিসার্চ কিভাবে করে, কিওয়ার্ড রিসার্চ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এবং ভালো বাংলা কিওয়ার্ড রিসার্চ টুল কোণগুলো। কিওয়ার্ড-keyword-কি-কত-প্রকার-কিওয়ার্ড-রিসার্চ-কিভাবে-করে সূচিপত্র 1 কিওয়ার্ড(keyword)কি 2 কিওয়ার্ড কত প্রকার(types of keywords) 2.1 ক. অভিপ্রায় ভিত্তিক প্রকার (Based On Keyword Intend ) – 2.1.1 ১. মার্কেটিং কিওয়ার্ড(marketing) 2.1.2 ২. ব্রান্ড বেসড কিওয়ার্ড (brand) 2.1.3 ৩. লোকেশন বেসড কিওয়ার্ড (geo-targeting) 2.1.4 ৫. কম্পিটিশন বেসড কিওয়ার্ড(competitor) 2.1.5 ৬. কাস্টমার বেসড কিওয়ার্ড (customer centric) 2.2 খ. কিওয়ার্ড দৈর্ঘ্য নির্ভর ভাগ (based on length) 2.2.1 ১. Short-tail keyword ...

প্রসেসর কি? প্রসেসর কিভাবে কাজ করে?

প্রসেসর কম্পিউটারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা এটাকে CPU বা সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বলে জানি। কম্পিউটারের এই অংশটি মূলত আমাদের কমান্ড প্রসেস করে এবং আউটপুট দেয়। প্রসেসরকে বলা হয় কম্পিউটারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারণ প্রসেসিং ইউনিট ছাড়া আমরা কম্পিউটারের কোনো ধরনের কাজ করতে পারি না। আজ আমরা এই ব্লগ পোস্টে জানবো প্রসেসর কি, কিভাবে কাজ করে, এর গঠন কি এবং প্রসেসর কি কি। তো চলুন শুরু করা যাক আমাদের আজকের ব্লগ পোস্ট। আশা করি এই ব্লগ পোস্টটি পড়ার পর আপনি প্রসেসর সম্পর্কে আপনার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। প্রসেসর কি? প্রসেসর হল আমাদের ফোন বা ল্যাপটপে এক ধরনের বিশেষ হার্ডওয়্যার যা আমাদের নির্দেশ বা ইনপুট গ্রহণ করে এবং আমাদের ডিসপ্লের সামনে আউটপুট হিসেবে প্রদর্শন করে। সহজ ভাষায় যিনি প্রসেস করেন তিনি প্রসেসর। অর্থাৎ, আমাদের নির্দেশগুলি প্রসেস করে ভিজ্যুয়াল আকারে আমাদের কাছে আনা হয়। কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে প্রসেসর ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। প্রসেসর ছাড়া এই দুটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস একেবারেই অচল। প্রসেসর হল এক প্রকার গাণিতিক ইঞ্জিন। কারণ এটি একটি স্বয়ংসম্পূ...